প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জীবন হয়ে গেছে সহজ। কমছে সময়ের অপচয়। এটা যে শুধু ব্যক্তিজীবনের জন্য তা কিন্তু না। কর্মজীবনেও প্রযুক্তি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অটোমেশনের বদৌলতে বাড়ছে কাজের গতি। অন্য সব প্রযুক্তির সাথে এখন কোম্পানির মানবসম্পদ (HR) বিভাগেও ভূমিকা রাখছে বিভিন্ন HR ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্পোরেট, সেমি-কর্পোরেট, ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ব্যবস্থাপনা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছে অটোমেটেড HR সফটওয়্যার। সাধারণত অটোমেশন একটা কোম্পানির কাজের গতি 20%-90% বাড়িয়ে দিতে পারে। HR সফটওয়্যারগুলো অটোমেশন, ডেটা বিশ্লেষণ এবং স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সময়কে সাশ্রয় করে এবং কাজের গতি বাড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রাজিল, চীন, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই HR সফটওয়্যার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে HR সফটওয়্যার অনেক নতুন প্রবণতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে যাচ্ছে, যা কর্মীদের ব্যবস্থাপনা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। নিচে প্রধান ৬টি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML)
প্রতিনিয়ত HR সফটওয়্যারে AI এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার বাড়ছে। এর মাধ্যমে কর্মী নির্বাচন, কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন, কর্মীদের শেখার প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ, এমনকি কর্মী ধরে রাখার কৌশল(Employee Retention) তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে AI এবং ML কর্মচারীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ প্রবণতা অনুমান করতে পারে, যেমন কোন কর্মচারী প্রতিষ্ঠান ছাড়তে পারেন। ফলে HR বিভাগ চাইলে কর্মীকে ধরে রাখার জন্য আগাম পদক্ষেপ নিতে পারে। এছাড়াও AI ভিত্তিক চ্যাটবটের সাথে অটোমেটিক সিস্টেমগুলো কর্মীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে তারা নিয়মিত প্রশাসনিক কাজও দ্রুততার সাথে করে ফেলতে পারে। এটি সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
২) অটোমেশন (Automation)
ম্যানুয়াল ডেটা এন্ট্রি এবং প্রসেসিং অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ভুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে। Deloitte রিপোর্ট অনুযায়ী, HR অটোমেশন কর্মপ্রক্রিয়ার সময় 50% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। তাই HR প্রক্রিয়াগুলো অটোমেশন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটি বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন বেতন ব্যবস্থাপনা, কর্মীদের উপস্থিতি ট্র্যাকিং, এবং ছুটির ব্যবস্থাপনা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। PwC‘র গবেষণায় দেখা গেছে, অটোমেশন ব্যবহার করে HR টিম তাদের সময়ের একটি বড় অংশ বাঁচাতে পারে, যা তারা কৌশলগত এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মনোনিবেশ করতে ব্যবহার করতে পারে। তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে যে বেতন এবং কর্মী ধরে রাখার ক্ষেত্রে অটোমেশন 30% পর্যন্ত খরচ সাশ্রয় করতে পারে।
৩) ডেটা অ্যানালিটিক্স
ডেটা অ্যানালিটিক্স (Data analytics) এবং প্রেডিক্টিভ অ্যানালিটিক্সের (Predictive analytics) মাধ্যমে কর্মীদের সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। HR টিমকে কর্মচারীদের পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে নিয়োগ এবং বেতন ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে। HR সফটওয়্যার অটোমেটিক্যালি প্রার্থীদের আবেদন প্রসেস করে, তাদের স্কোরিং করে এবং AI ভিত্তিক পরামর্শ দেয়। এটি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে 70%-80% দ্রুততর করে। কর্মচারীর পারফরম্যান্স ডেটা বিশ্লেষণ করে HR টিম জানতে পারে কোন কর্মীরা উচ্চ পারফর্মার এবং কারা আরও উন্নতি করতে পারে। পারফরম্যান্স রেটিং বিশ্লেষণ করে প্রোমোশন, বোনাস, এবং প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
৪) এমপ্লয়ি এক্সপেরিয়েন্স (EX)
বর্তমানে কর্মীদের অভিজ্ঞতা (Employee Experience – EX) উন্নত করার জন্য আধুনিক HR সফটওয়্যার ডিজাইন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কর্মীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস তৈরি করা। যা কর্মীদের কাজকে সহজতর করে এবং দ্রুত এবং সহজ অ্যাক্সেসযোগ্য সেবা প্রদান করে। ছাড়াও ফিডব্যাক সিস্টেম দিয়ে কর্মীদের থেকে মতামত সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। কর্মীরা তাদের কাজের পরিবেশে আরও সন্তুষ্ট থাকে এবং কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হয়।
৫) মোবাইল-ফার্স্ট প্ল্যাটফর্ম
মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় HR সফটওয়্যার মোবাইল-ফার্স্ট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠছে। কর্মীরা যেকোনো স্থান থেকে মোবাইলের মাধ্যমে তাদের কাজ করতে পারে, যার ফলে কর্মক্ষেত্রের গতিশীলতা আরও বাড়ছে। মোবাইল HR সফটওয়্যার কর্মচারীদের রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশন এবং আপডেট প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৬) শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রযুক্তি
HR সফটওয়্যারগুলোকে কর্মীদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে ডিজাইন করা হচ্ছে, যা কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়ক। নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক প্রশান্তির দিকে ফোকাস করে বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কাজ করছে। এই ট্রেন্ডগুলো ভবিষ্যতে HR সফটওয়্যারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে এবং কর্মী ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ ও সমন্বিত করে তুলবে।
HR অটোমেশন এবং নতুন প্রযুক্তির প্রবণতাগুলো ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে চলেছে। কর্মী ব্যবস্থাপনা, পারফরম্যান্স মূল্যায়ন, এবং স্বাস্থ্য কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যারগুলো বড় ভূমিকা পালন করবে, যার ফলে কাজের গতি বাড়বে এবং ভুলের সম্ভাবনা কমে যাবে। Accenture উল্লেখ করেছে, অটোমেশন ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় $10.3 ট্রিলিয়ন বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি কৌশলগতভাবে জেনারেটিভ AI-এর সাথে সংযুক্ত থাকে।