মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা (HRM) প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। বাজারে দিনকে দিন HR সল্যুশনগুলো আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আপডেট ফিচার আর সহজ ব্যবহারের সুবিধার জন্য। আধুনিক HR সল্যুশনগুলো শুধু যে কাজের গতি বাড়াচ্ছে তা না, এমপ্লয়িদের অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে তুলছে। কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল ধারা, রিমোট এবং হাইব্রিড জবের কর্মীদের উপর ভূমিকা রাখছে সফটওয়্যারগুলো। সেই সাথে কর্মীদের প্রোডাক্টিভিটির সাথে সন্তুষ্টিও নিশ্চিত করছে। HR সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পাল্লা দিয়ে নিজেদের সফটওয়্যারগুলো আপডেট করে চলেছে।
এই ব্লগে, আমরা ২০২৫ সালে HR সল্যুশনে ভালো করতে পারে এমন ৭ টি ফিচার নিয়ে আলোচনা করব, যা ব্যবসাকে আরও দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
১. এআই(AI)বেজড রিক্রুটমেন্ট
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রযুক্তিখাতে। HR সল্যুশনেও AI ভূমিকা রাখছে। প্রার্থীর সিভি বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে যোগ্য প্রার্থী বাছাই এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করছে AI । AI চ্যাটবটের(Chatbot) মাধ্যমে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করা হবে সহজে। এভাবে, নিয়োগকারী দলের সময় সাশ্রয় হবে এবং যোগ্য প্রার্থী বের করা সহজ হবে।
২. প্রেডিকটিভ অ্যানালিটিক্স
HR ব্যবস্থাপনায় প্রেডিকটিভ অ্যানালিটিক্স(Predictive analytics) থেকে কর্মীদের পারফরম্যান্স(Performance), সন্তুষ্টি(Satisfaction) এবং টার্নওভরের সম্ভাব্যতা বের করা সম্ভব। এটি কোন কর্মী কোম্পানি ছেড়ে দিবে কিংবা কে প্রমোশনের(Promotion) জন্য প্রস্তুত এসবের আগাম পূর্বাভাস দিতে পারে। ফলে যদি কোনো কর্মীর কাজের প্রতি অনাগ্রহ দেখা দেয়, তাহলে প্রেডিকটিভ অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে এটি দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীকে পুনরায় অনুপ্রাণিত করার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
৩. কাস্টমাইজেবল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন
কর্মীদের জন্য মোবাইল অ্যাপ এখন শুধু সুবিধা নয় বরং প্রয়োজনীয়তা। কর্মীরা তাদের মোবাইলের মাধ্যমে সেলফি এটেন্ডেস, ছুটির আবেদন, পে-স্লিপ দেখা এবং রিয়েল-টাইম আপডেট সব দেখতে পারবে। কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা কর্মীদের কাজের গতি বাড়াবে এবং সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। ২০২৫ সালে, HR সফটওয়্যার মোবাইল অ্যাপে আরও আপডেট ফিচার অন্তর্ভুক্ত করবে যা দিয়ে কর্মীদের জন্য ব্যবহার সুযোগ হবে।
৪. ইন্টিগ্রেটেড পে-রোল এবং ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা
২০২৫ সালে অটোমেটেড পে-রোল এবং ট্যাক্স ফিচারগুলো আরও স্মার্ট হবে। মাসিক বেতন(Salary) হিসাব, ট্যাক্স ক্যালকুলেশন(Tax calculation) এবং রিপোর্টিং সম্পূর্ণ অটোমেশনের মাধ্যমে আরও নির্ভুল এবং কম সময়ে সম্পন্ন করা যাবে। এই ফিচারটি বিশেষত বড় আকারের প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় সুবিধা হবে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের সময় ও খরচ সাশ্রয় করবে।
৫. এমপ্লয়ি এক্সপেরিয়েন্স
২০২৫ এ কর্মক্ষেত্রে এমপ্লয়ি এক্সপেরিয়েন্স (Employee Experience) নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ওয়েলবিং ট্র্যাকিং(Wellbeing tracking)- এর মাধ্যমে, কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের তথ্য মনিটর করা, ফিডব্যাক সিস্টেমের মাধ্যমে- কর্মীদের সাথে শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক উন্নত করা, এনগেজমেন্ট টুলসের মাধ্যমে, কর্মীদের কাজের প্রতি সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখবে। কর্মীদের সুখী ও সম্পৃক্ত রাখার জন্য কোম্পানিগুলোকে তাদের অভিজ্ঞতা আরও মানবকেন্দ্রিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।
৬. হাইব্রিড ওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট টুল
অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য হাইব্রিড কাজের মডেল স্থায়ী সমাধান হয়ে উঠছে। এই মডেলকে আরও কার্যকর করতে HR সল্যুশনে আরও উন্নত ফিচার যেমন, ভার্চুয়াল মিটিং সিডিউলিং, রিমোট ট্র্যাকিং, এবং অফিস ও রিমোট কর্মীদের জন্য পৃথক ওয়ার্কফ্লো। এতে কাজের সামঞ্জস্য এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। সেই সাথে ক্লাউড ভিত্তিক সিস্টেমের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে কাজের অগ্রগতি মনিটর করা যাবে এই ফিচারের মাধ্যমে।
৭. ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার
২০২৫ সালে ব্লকচেইনের সুরক্ষা, স্বচ্ছতা এবং ডেটা ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে HR কার্যক্রম আরও কার্যকর এবং নির্ভুল হবে। এটি HR সল্যুশনে নিরাপত্তা এবং ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। কর্মীদের ডেটা এবং রেকর্ড সুরক্ষিত রাখতে ব্লকচেইন বড় ভূমিকা রাখবে, তথ্য লিক বা হ্যাকিং থেকে প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখবে। বেতন, চুক্তি এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নির্ভরযোগ্যভাবে সংরক্ষণ করা যাবে।
২০২৫ সালে HR সল্যুশনের অগ্রগতির ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও দক্ষতার সঙ্গে কর্মীদের পরিচালনা করতে পারবে। এআই, ব্লকচেইন, এবং অটোমেশন প্রযুক্তির মিশ্রণে কাজের গতি বাড়বে এবং কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা হবে আরও মানবিক। এই ফিচারগুলো শুধু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লাভ বাড়াবে না, কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টিও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে।